আমি যদিও মাদরাসাতে কখনো পুরা তেলাপোকা পাইনি, কিন্তু বিভিন্ন প্রকারের কেড়া, পোকা পেতাম, তবে কেউ পোকা খেলেও কখনো কিছু বলতাম না!
ফিলিস্তিনি কন্যা আমালে’র জীবনে হাঁটছি দ্বিতীয়বারের মতো৷
হাতেগোনা যে ক’টি বই আমাকে খুব করে টেনেছে, “‘সুপ্রভাত ফিলিস্তিন’ তারমধ্যে অন্যতম!
“উম্মে আহমদ ছিলেন আমাদের বাবুর্চি৷ আমাদের প্রতিদিন তিন বেলার খাবার রাঁধতেন তিনি৷ প্রায় ২০০ জন উঠতি বয়সী ছাত্রীর খাবার৷ প্রতিদিন নাশতায় থাকত একটি রুটি আর গরম চা৷
চা যতখুশি নেওয়া যেত৷ সকালের নাশতার সময় আমি প্রায় দিন দেরিতে যেতাম৷ রাতে থাকত একই খাবার৷ সঙ্গে এক টুকরো মরটাডেলা দেওয়া হতো শুধু৷ চার বছরে এই এক খাবার দেওয়া হতো আমাদের৷ তেমন পরিবর্তন হয়নি কখনো৷
দুপুরে ছিল বলতে গেলে রাজকীয় খাবার৷ ভাপে সেদ্ধ করা মাংস দেওয়া হতো ভাতের উপর৷ বড় পাত্রে রান্না করা হতো মাংস৷ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাংস খাওয়া যেত৷ সমস্যা ছিল যে মাঝেমধ্যে মাংসের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়া যেত, যেগুলো থাকত এতিমখানার রান্নাঘরে৷ এসবে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম৷
কে মাংস থেকে বেশি পোকা বের করতে পারে, এজন্য আমরা প্রতিযোগিতা করতাম৷ মাংসের সঙ্গে ঢেড়শ বা টমেটো দিলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যেত৷ কিন্তু পুদিনা পাতা দিয়ে রান্না করা হলে বের করা কঠিন হয়ে যেত৷ কত বোকা মেয়ে ভুল করে কত দিন তেলাপোকা খেয়ে ফেলেছিল৷
মুনাও একবার খেয়ে ফেলেছিল তেলাপোকা৷ প্রথমে প্লেট থেকে তিনটি পোকা বের করার পর সে ভেবেছিল আর পোকা নেই৷ সে পুরো প্লেট খেয়ে সাবাড় করল৷ কিন্তু খাওয়ার পর তার দাঁতের ফাঁক থেকে তেলাপোকার পা বের হলো৷
একটি মেয়ের চিৎকার করে বলল, ‘মুনা জুলায়তা তেলাপোকা খেয়েছে৷’ খাবার ঘরে হাসির রোল পড়ে গেল৷ মুনা মুনা বলে সবাই চিৎকার করতে লাগল৷ এমন সময় মিস হায়দার উপস্থিত হলেন৷ আমাদের ‘হাইওয়ান’ বলে ধমকে বললেন চুপ করতে৷
মিস হায়দার যেতেই আবার শোরগোল শুরু হলো৷ মেয়েরা আমাদের টেবিলের এসে মুনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো৷
মনে হলো, মুনা যেন যুদ্ধে আহত কেউ৷”
বই: (মর্নিংস ইন জেনিন)
মূল: সুজান আবুলহাওয়া,
ভাষান্তর;
“সুপ্রভাত ফিলিস্তিন”
নাজমুস সাকিব৷