আমাদের সম্পর্কে

নবপ্রকাশ সাধারণভাবে তিন ক্যাটাগরির বই প্রকাশে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ—ইতিহাস, গল্প, উপন্যাস; নিদেনপক্ষে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জীবনী। এর বাইরে নবপ্রকাশ কোনো ধরনের বই প্রকাশ করবে না। আশা করি আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে পারব। এক্ষেত্রে পাঠকের ভালোবাসা এবং আন্তরিক সহযোগিতাই আমাদের লক্ষ্য পূরণের সবচে দৃঢ় জিয়নকাঠি।

স্বপ্ন দেখলে অনেকভাবেই দেখা যায়, যদি স্বপ্নটা সঠিকভাবে দেখা হয়, স্বপ্ন পূরণে নিজের ভেতর যদি সত্যিকারের বেকারারি সৃষ্টি হয়। সেবা প্রকাশনীকে দেখুন—তারা ওয়েস্টার্ন ঘরানার বই ছাপিয়ে বিখ্যাত হয়েছে। বিদেশি সাহিত্য সবচে বেশি ছাপিয়েছে ওরা, কিন্তু সবই পশ্চিমের। আমরা চিন্তা করলাম, আমরা ইস্টার্ন আর মিডলইস্টার্ন মানে প্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বই ছাপব। প্রাচ্য আর মধ্যপ্রাচ্যেও অ্যাডভেঞ্চার বা থ্রিলের কমতি নেই। তো প্রাচ্যে কি গত এক হাজার বছরে কোনো ফিকশন লেখা হয়নি? আলবৎ হয়েছে। এবং সেগুলোর সাহিত্যমান ও পাঠকপ্রিয়তা কোনো অংশেই পশ্চিমের চেয়ে কম নয়। দুঃখের বিষয় হলো, আমাদেরকে প্রাচ্যের সেই হাজার বছরের ফিকশন সাহিত্যের সঙ্গে কেউ সেভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়নি। ফলে, বাজার দখল করে আছে বুনো পশ্চিম। ব্রিটিশ উপনিবেশ চলে গেছে, কিন্তু পাঠ ও চিন্তাগত গোলামি আমরা সেই ব্রিটিশদেরই করি।

আমরা বহুদিন ধরে কুরুচিপূর্ণ আধুনিক সাহিত্য এবং ইসলামের নামে কুরুচিপূর্ণ বই বা প্রকাশনার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি। আরও অনেকেই এ ব্যাপারে খেদ ঝেরেছেন নানা সময়ে। কিন্তু সমস্যা তাতে কোনো প্রকার কমেছে বলে মনে হয় না। না হওয়ারই কথা। `সত্য সমাগত হলে মিথ্যা বিদূরিত হবে’—কিন্তু আমরা শুধু মিথ্যাকে দূরীভুত করার ওয়াজ করেছি, নিজেরা কখনো সত্যকে সামনে নিয়ে আসার সাহস করিনি। নিজেরা কলম হাতে ময়দানে নামিনি। বইয়ের বিরুদ্ধে বই দাঁড় করাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের দায়। নবপ্রকাশ অনেকাংশে এ দায়শোধেরই বহিঃপ্রকাশ। সম্বল ক্ষুদ্র, ব্যক্তি দুর্বল, পথ দুর্লঙ্ঘ, স্বপ্ন আকাশসম, দৃঢ়তা পাহাড়ের মতো, ভালোবাসা সীমাহীন—সহায় আল্লাহ।

নবপ্রকাশ সচরাচর ইসলামি প্রকাশনাশিল্প থেকে কিছুটা আলাদা চিন্তা ও চেতনা নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান। একরৈখিক বা সীমাবদ্ধ চিন্তা শুধু নয়, আমরা আমাদের পাঠকদের পরিচিত করতে চেষ্টা করছি সারা বিশ্বের ইসলাম ও মুসলিম সাহিত্যের সঙ্গে। বিশ্ব কীভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের দেখছে, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, এমনকি পাশ্চাত্যে কীভাবে ইসলাম সমাদৃত হচ্ছে—আমরা সেই সব লিখিত দলিল আমাদের পাঠকের সামনে পেশ করতে বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ চিন্তা অনেকটা দুঃসাহসী, সমালোচনা আর বিরোধিতার ভয় অনেক, তবু আমরা থেমে থাকিনি। থাকবও না আশা করি। এর কারণটা বলি। নবপ্রকাশ ক্ষুদ্র কোনো জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে বই প্রকাশ করে না। আমাদের প্রতিটি বই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবে প্রকাশ করা হয়। শুধু মসজিদ-মাদরাসা বা ইসলামি ঘরানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় আমাদের উদ্দিষ্ট পাঠকশ্রেণি।

আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমাদের বইটি মাদরাসার একজন তলবে এলেম যেমন পাঠ করে উপকৃত হবে, তেমনি এ বই যেন সচিবালয়ের একজন সচিব পড়েও বিমোহিত হন। কেননা, ইসলামের কথা শোনার অধিকার সকলেরই সমান এবং তাদেরকে এসব কথা শোনানোর দায়িত্বও আমাদের। মান্ধাতা আমলের ভাষা ও ভাষারীতি, সম্পাদনা ও বানানশুদ্ধি ছাড়া লেখা, ম্যাড়মেড়ে কাগজ ও বাঁধাইয়ের একটি বই নিশ্চয় একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষকে প্রভাবিত করবে না। এমন একটি বই পড়তে গেলে তার বিরক্তির উদ্রেক হবে, এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে আমাদের বইয়ের ভাষা আধুনিক এবং প্রাঞ্জল, বানানরীতি আধুনিক এবং প্রমিত, বইয়ের গুণগত মান সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাখতে আমাদের চেষ্টার ত্রæটি নেই। আশা করি আমাদের পাঠক আমাদের মানের ব্যাপারে কখনো দ্বিমত পোষণ করবে না।

নবপ্রকাশ সম্পূর্ণ পেশাদারী মনোভাব নিয়ে প্রকাশনাশিল্পে যাত্রা করেছিল। এ কারণে আমাদের প্রকাশিত সেই প্রথম বই থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বই নির্বাচন, বইয়ের বিষয়বস্তু, ভাষা, সম্পাদনা, কাগজ ও ছাপার মান, আন্তর্জাতিক মানের বাঁধাই দিয়ে প্রতিটি বইকে মাইলফলক করতে।

প্রকাশনী যখন শুরু হয় তখনই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, বইয়ের মধ্যে যেন সামান্যতম বানান ভুল না থাকে। মানুষজন যাতে ‘ইসলামি বই বানান ভুলে ভরা’—এমনতর নাক সিঁটকাতে না পারে।

নবপ্রকাশ ঊষার দিগন্তে এক উড়ন্ত উল্লম্ফন। তার লাফের সঙ্গে যদি তাল মেলাতে পারেন, তবে সেটা এ জাতির জন্যই মঙ্গলজনক। নবপ্রকাশ-এর সঙ্গে দিগ্বিজয়ের আকাশে উড়াল দিতে আপনাকে স্বাগতম, হে পাঠক!