বই সংক্ষেপ: ষোড়শ শতকের অটোমান সাম্রাজ্যের একজন নৌসেনাপতির রোমাঞ্চকর ভ্রমণকাহিনি ‘মিরআতুল মামালিক : দ্য অ্যাডমিরাল’। তুর্কি উসমানি খেলাফতের নৌসেনাপ্রধান সাইয়িদি আলি রইসের লেখা অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ গ্রন্থটি সঙ্গত কারণেই লাভ করেছে চিরায়ত ইতিহাসের মর্যাদা। এতে বিবৃত হয়েছে পর্তুগিজ জলদস্যুদের সাথে সংঘটিত অ্যাডমিরালের রোমহর্ষক সমুদ্রযুদ্ধ, জলদস্যুদের তাড়া করতে গিয়ে কূলহারা আরব সাগরের বুকে হারিয়ে যাওয়া, তরঙ্গবিক্ষুব্ধ ভারত মহাসাগরের ভাগ্যরোহিত ভয়াল দিনগুলো, সমুদ্রঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসা, ভারতবর্ষসহ বিস্তীর্ণ মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ধর্মীয় ও সামাজিক চিত্রাবলি, অতি নিকট থেকে দেখা মুঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক বিবরণসহ আরও নানাপদী পাঠ্যস্বাদ।
ইরান তুরান খোরাসান কাবুল দিল্লি সিন্ধু গুজরাট বসরা মসুল তিকরিত বাগদাদ বোখারা সমরকন্দসহ এশিয়া মাইনরের বিস্তীর্ণ এলাকা ভ্রমণ করেন তিনি। বাংলা ভ্রমণসাহিত্যে বইটি বিশেষ গুরুত্ব রাখার কারণ হলো, লেখক চট্টগ্রাম উপকূলও ভ্রমণ করেছেন পনেরো শতকের উত্তাল সে সময়টিতে। দিল্লির শাহি প্রাসাদে রাজকীয় অতিথি হিসেবে অবস্থানকালে সম্রাট হুমায়ুনের পরলোকগমন, তার পুত্র আকবরের দিল্লির মসনদে আরোহণ ও সিংহাসন রক্ষার অনেক শাহি কূটচাল অতি নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করায় গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে চিরায়ত ইতিহাসের জীবন্ত ও অমর দলিল।
তুর্কি নৌসেনাপ্রধান সাইয়িদি আলি রইস তার ভ্রমণবৃত্তান্তটি রচনা করেছেন তুর্কি ভাষায়। ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত গ্রন্থটি আরবি ইংরেজি স্প্যানিশ রাশান পর্তুগিজসহ পনেরোটির অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাছাড়া নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে বইটি পৃথিবীর অনেক নৌবাহিনীতে বিশেষভাবে পাঠ্য।
দিগ্বিজয়ী ভ্রমণবৃত্তান্তটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন কবি ও সুলেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। উপন্যাসের আদলে অনূদিত ভ্রমণকাহিনির অনবদ্য গদ্যে পাঠকের মনে হবে, ইতিহাসের উত্তাল সমুদ্রে অ্যাডমিরালের নৌবহরের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন তিনি নিজেও। দুর্দান্ত ও ভয়ার্ত সব অ্যাডভেঞ্চার যেন চোখের সামনে ঘটে চলেছে।