রাসুলের জন্য ভালোবাসা শিরোনামে মলাটবদ্ধ হয়েছে আলি তানতাভির এগারোটি প্রবন্ধ। রচনাগুলোর জন্মক্ষণ ১৯৩২ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত বিস্তৃত। ইতস্ত বিক্ষিপ্ত রচনাগুলো মলাটবদ্ধ করা ছিল একটি আয়াসসাধ্য কাজ৷ সেটিই আঞ্জাম দিয়েছেন লেখকের দৌহিত্র মুজাহিদ মামুন দিরানিয়্যা। লেখাগুলোর কোনো কোনোটি প্রকাশের আগে পঠিত হয়েছিল বেতারে, উপস্থাপিত হয়েছিল আলোচনাসভায় বক্তৃতা হিসেবে।
আলি তানতাভি নবীজির জীবন নিয়ে রীতিমতো সাধনা করেছেন। আজীবন সিরাত নিয়ে লিখেছেন বিস্তর। বক্তৃতা-অধ্যাপনা করেছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে। তাঁর দীর্ঘ সিরাতযাপনের সরল অভিব্যক্তির কিছু পাওয়া যাবে প্রথম প্রবন্ধের ভূমিকা অংশে। অবশ্য গোটা বইজুড়েই ছড়িয়ে আছে সিরাত বিষয়ে তাঁর গভীর দৃষ্টি ও বিপুল অভিজ্ঞতার সারনির্যাস। যা আশা করি, বোদ্ধা পাঠকের চোখ এড়াবে না।
বইটির লেখক বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলি তানতাভি। ১৯০৯ সালে সিরিয়ার দামেশকে জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাভি নামেই তিনি সমধিক পরিচিত।
ছাত্রজীবনেই তুখোড় মেধার কারণে তিনি শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সতের বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে।
১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন।
গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মুকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে।
১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে শাইখ আলি তানতাভি মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।