বই সংক্ষেপ: মা’কে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, অনেক গ্রন্থ। কিন্তু বাবাকে নিয়ে লেখা হয়েছে সামান্যই। বাবার জন্য ভালোবাসার ধূপ জ্বেলে নিজের জীবনকে সুরভিত করার গল্প বলেছেন লোকমান হাকিম।
লেখক নিজেই বলছেন তার অনুভূতির কথা—
‘আমার এক দু’টো লেখা পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। আমি তা কাউকে বলিনি। তবুও ছোট ভাইয়েরা এসব ঘাঁটাঘাঁটি করে বের করে আব্বুকে দেখিয়েছে। আব্বু লেখাগুলোয় চোখ বুলিয়েছেন। একটু নেড়েচড়ে দেখেছেন। দেখে যেমন খুশি হয়েছেন তেমনি মন খারাপও করেছেন। আমি কি লেখাপড়া ফেলে রেখে এখন তবে এসবই করছি? আর এসব বলতে কী করছি—তা তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। আমাকে নিয়ে এক ধরনের ভয়, শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তাঁর মাঝে কাজ করছে।
‘আর আমার লেখাপড়াও প্রায় শেষের দিকে। এ বছরের পর আর পড়া হবে কি না তা নিশ্চিত বলা যায় না। শিক্ষা জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে যদি পেছনের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে যে মানুষটাকে এত দূর থেকেও কাছে দেখা যায়, যার অকল্পনীয় মেহনত-শ্রম, উৎসাহ উদ্দীপনা আর ভালোবাসা আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে থেকেছে—তিনি আমার আব্বু। মানুষটা আমার জন্য কত কী করেছেন, কতভাবে অবদান রেখে গেছেন তার চুলচেরা হিসাব আমি বের করতে পারব না। শ্রমে, ঘামে, স্নেহে, ভালোবাসায় আমাকে বড় করেছেন। লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আর শিখতে শিখতেই আমি আজ এতদূর এসেছি। কিভাবে এসেছি, তা ভাবতেও অবাক লাগে। হিসাব মিলানোটা কঠিনও বটে।
‘আমার জীবনের যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো ত্যাগে, বেঁচে থাকার আনন্দে, কষ্টের তীব্রতায় আমার বাবাই ছিলেন একমাত্র সঙ্গী। ছিলেন আমার বিপদের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য বন্ধু, আমার সহায়। দিনের পর দিন নানা জটিলতায় ভুগেও তিনি আমার জন্য যা করেছেন, করে চলেছেন; তার সামান্য ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না। শোধ করার ক্ষমতাও আমার নেই। মানুষটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক সেদিক ছুটে চলেন শুধু একটাই স্বপ্ন নিয়ে—আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। ভালো কিছু করার স্বপ্ন।’