সামার ইয়াজবেক-এর দ্য ক্রসিং বইটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহতম ট্র্যাজেডির অন্যতম সিরিয়া যুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিববরণ—মর্মস্পর্শী, করুণ। সামারের অত্যন্ত সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা আমাদের মৃতপ্রায় মানবিক অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলবে বলে আমার ধারণা। সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করে যুদ্ধের দৃশ্যগুলোর বর্ণনা কলমের আঁচড়ে তুলে নিয়ে আসা কোনো সহজ ব্যাপার নয়।
একটা ব্যাপার অনুধাবনযোগ্য, সিরিয়ার যুদ্ধটা শুরুতে ছিল কেবলই মুক্তিকামী সিরীয়দের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র লড়াই। কিন্তু যুদ্ধের পারদ যখন ঊর্ধ্বে উঠতে থাকে তখন এ লড়াইয়ের মঞ্চ প্রতিদিন পাল্টাতে থাকে। নাম না জানা অসংখ্য কুশীলব তৎপর হয়ে ওঠে সিরিয়ার মানচিত্রকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য। অনেক বিদেশি শক্তি তো বটেই, স্বার্থের টানে সিরিয়ায় যুদ্ধরত মুক্তিকামী দলগুলোও শতধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তির ফলেই সেখানে জন্ম নেয় উগ্রবাদী বিভিন্ন উপদল, যা পরবর্তীতে সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ বই লেখকের নিজ মাতৃভূমিকে স্পর্শ করার একান্ত ব্যক্তিগত আবেগে রচিত। যুদ্ধবিধ্বস্ত, রক্তস্নাত, বেঁচে থাকার সুতীব্র লড়াইয়ের যে ধারাবর্ণনা তিনি দিয়েছেন—সবই নিজের চোখে দেখা করুণ সত্য।
দ্য ক্রসিং বর্তমান সিরিয়ার সেই জলজ্যান্ত ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, যে সিরিয়াকে আমরা এতদিন স্থিরচিত্র কিংবা কিছু ভিডিওক্লিপ আকারে দেখে এসেছি। বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরের পর শহর, যুদ্ধবিমান থেকে নেমে আসা অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুদানব, উদ্বাস্তু মানুষের গ্লানিময় জীবন—সবকিছু লেখক তুলে এনেছেন পরম মমতায়। একই সঙ্গে সেখানে যুদ্ধরত এবং বিবদমান প্রত্যেকটি সশস্ত্র দল সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ বর্ণনা পাঠককে নতুন করে ঋদ্ধ করবে।